সত্য মনোবিজ্ঞানের ভাষায় সত্য চিন্তার বিপরীত হচ্ছে দুশ্চিন্তা। সত্য চিন্তা মানুষের প্রকৃতিজাত। সত্য চিন্তায় থাকে সত্য বিশ্বাস। সত্য বিশ্বাস মানে ধর্মীয় বিশ্বাস। প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাসী। তবে ইসলামই হচ্ছে আল্লাহর মনোনীত জীবন বিধান। মানুষ যখন নিজের ইচ্ছাকে কেন্দ্র করে তার কর্মপরিচালনা করতে চায়, তখন তার মনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই দ্বান্দ্বিক মনোভাব তাকে নানা ধরনের বুদ্ধির কূটকৌশলে আটকে রেখে নানা জটিলতার সৃষ্টি করে। এ ধরনের মন সব সময় অসুস্থ থাকে। আরো স্পষ্টভাবে বলা যায়, মানুষ যখন তার মনের আনুগত্য করে তখন সেখানে সত্যের আনুগত্য বিলুপ্ত হয়ে যায়। কামনা-বাসনাকে যারা ইলাহ্ (উপাস্য) বানিয়ে নেয়, তারা মনের আনুগত্যের কারণে দিশেহারা হয়ে যায়। তাদের মনের মধ্যে বিরাজ করে দুশ্চিন্তা। সত্য চিন্তা, ইতিবাচক চিন্তা তাদের মন থেকে দূরীভূত হয়ে যায়। তাই দুশ্চিন্তার বড় ওষুধ বিশ্বাসের আনুগত্য। বিশ্বাসের ভিত্তিতেই তার মনে সত্য চিন্তার বিকাশ হবে। সত্য চিন্তার বিকাশ হলে তার মন সুন্দর এবং পবিত্র হয়ে যাবে। যেমন পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে মহান আল্লাহর আনুগত্যে নিবেদিত হবে সে মন শক্তিশালী হবে। এমন কোনো সহজাত বস্তুকে ভয় করে না। দুনিয়াবি কোনো শক্তির ভয়ে সে ভীত হবে না। সর্বক্ষণ, সর্বকাজে এ মনের ভরসা হবে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা। বলুন তো, এ ধরনের মনে কখনো কি দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধতে পারে?
-ইসলামিক সাইকোথেরাপি ফিচার
যখন আমাদের মনে কোনো দুশ্চিন্তার ছায়া আমরা দেখতে পাবো, তৎক্ষণাৎ আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে, কোথাও আমাদের বিশ্বাসে কিংবা ভরসায় অন্য কোনো শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে কি না। সাপ, বিচ্ছু, সিংহ, বাঘ বা অন্য কোনো শক্তির ভয়ে আমরা ভীত কি না। কিংবা কোনো লোভলালসার প্রলোভন মনকে বিপথগামী করছে কি না। মন যখন ইচ্ছার আনুগত্য করে, অর্থের আনুগত্য করে, সামাজিক শক্তির আনুগত্য করে, নাম-খ্যাতির আনুগত্য করে, তখন বুঝতে হবে মন তার মনের আনুগত্যে ব্যস্ত রয়েছে।
সত্য মনোবিজ্ঞানের বিশ্লেষণে এ ধরনের মন সব সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। তাই মনকে তার মনের আনুগত্য ত্যাগ করে মহান আল্লাহর আনুগত্যে ফিরিয়ে আনতে পারলেই দুশ্চিন্তা কেটে যাবে। মনের প্রশান্তি ফিরে আসবে। মনকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার প্রধান উপায় হচ্ছে, মহান আল্লাহকে একমাত্র অভিভাবক হিসেবে আনুগত্য করা। যে মন আল্লাহর বিধানের অনুসারী হবে, সে মন সব সময় প্রফুল্ল থাকবে। মহানবী সা:-এর অনুসারী মন-ই সত্যিকার ভালো মন। মনে রাখতে হবে, যে মন তার মনের আনুগত্য করবে সে মনে সব সময় ভয়, অস্থিরতা, আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত থাকবে। এ ধরনের মন শয়তানের অনুসারী মন। প্রচলিত মনোবিজ্ঞানে দুশ্চিন্তামুক্ত মনের জন্য অনেক কথা বলা হয়েছে। কাউন্সেলিং এবং পদ্ধতিগত বেশ কিছু উপায়-উপকরণের নির্দেশনাও রয়েছে এসব ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে। মনোবিশ্লেষণ, মনোকথন, মেডিটেশন, ডায়ানেটিকস, মনোথেরাপি, মিউজিক থেরাপি প্রভৃতি অনেক পদ্ধতি রয়েছে দুশ্চিন্তা লাঘবে উপায় হিসেবে। এ ধরনের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় মানসিক দুশ্চিন্তা লাঘবের যেসব পদ্ধতি রয়েছে, তা দ্বারা মনের সাময়িক উন্নয়ন প্রশান্তি লাভ সম্ভব হলেও সত্যিকার সাফল্যের হার খুবই কম। তাই সত্য মনোবিজ্ঞান (True Psychology) সত্যিকার মনোপ্রশান্তির জন্য ধর্মীয় বিশ্বাস প্রতিস্থাপনে বিশ্বাসী। বহু রোগীর জীবনবৃত্তান্ত বিশ্লেষণ করে আমরাও বলতে চাই, দুশ্চিন্তা লাঘবের প্রধান এবং একমাত্র উপায় হচ্ছে ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুশীলন। ইসলামের মহান বিধানে দুশ্চিন্তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কারণ, ইসলামে আনুগত্যশীল ব্যক্তির প্রধান ভরসা এবং অভিভাবক হচ্ছে- স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা। সুতরাং মনোভাব শুধু আল্লাহর অনুগত রাখতে পারলে সে মনে কখনো কোনোভাবেই দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধতে পারবে না। তাই আবারো বলছি, আল্লাহর আনুগত্যশীল মন কখনো কোনোভাবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে পারে না।
No comments:
Write comments