Adsence Advertise

Pages

Advertise

Copyright @ 2016 tarekurrahman. Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

শেষ চিঠি

 

গল্প - শেষ চিঠি

তারেকুর রহমান 


আজ মৌটুসী ডিভোর্স দিতে যাবে ফাহিমকে। মনটা বেশ বিষন্ন হয়ে আছে। জানালার পাশে চুল এলিয়েদিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মৌটুসী। আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। জীবনে কোনকিছুই পেলনা।নিজের অমতে বিয়ে করতে হলো ফাহিমকে। যাকে ভালবেসেছিল কয়দিন পর তাকেই বিয়ে করতেযাচ্ছে। মনের মধ্যে আনন্দ থাকার কথা। কিন্তু মনে একফোঁটা শান্তি নেই। ফাহিমেরওতো কোনদোষ নেই। বাবা মা জোর করেই ফাহিমের সাথে মৌটুসীর বিয়ে দেয়। কেন বাবা এ কাজ করলো।ঠিকইতো এখন আগের প্রেমিককে বিয়ে করতে হবে মৌটুসীর। অবশ্য এটা ফাহিমের উদারতার কারনেই সম্ভব হচ্ছে। কোন কিছুই ভাল লাগছেনা মৌটুসীর।আচ্ছা,আমি ফাহিমকে ডিভোর্স দিলে ও কিভাবে থাকবে? ও কি আবার বিয়ে করবে? বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। এ কি ফাহিমের প্রতি মৌটুসীর ভালবাসা? না না এ হতে পারেনা। মৌটুসী মনে মনে ভাবতে লাগলো ফাহিমের প্রতি তার ভালবাসা থাকতে পারেনা। ফাহিমের শেষ কথাগুলো এখনো কানে বাজছে। ফাহিম বলেছিল,তাকে যেন এখন ডিভোর্স না দেয়। বিয়ের আগের সপ্তাহে ডিভোর্স দিতে। আর একটা অনুরোধ করেছিল,বিয়ের সময় দেয়া হিরার আংটিটা যেন ফিরিয়ে না দেয়। ওটা মৌটুসীর কাছেই যেন থাকে।

মৌটুসী ফাহিমের দুটি প্রস্তাব মেনে নেয়। যে মানুষটা নিজের স্ত্রীকে ভালথাকার জন্য প্রেমিকের কাছে চলে যেতে সাহায্য করে তার যেকোন কথা শুনতে প্রস্তুত মৌটুসী। বাতাসে দোল খাচ্ছে মৌটুসীর চুলগুলো। বিষণè মন শূন্যে তাকিয়েই আছে। সাইরেনের আওয়াজ কানে আসলো তার। এই অসময়ে এম্বুলেন্স!  কোন আত্মীয় স্বজন তো অসুস্থ ছিলনা। তাহলে কেন এম্বুলেন্স এলো? কোন কিছুই মাথায় ঢুকছেনা মৌটুসীর। এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে তোলে। এম্বুলেন্স ঠিক বাসার নিচে এসে থামলো। সবাই কৌত‚হল নিয়ে দেখছে। মৌটুসীর ও ইচ্ছা হলো দেখার। লাশের মুখ থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে দেয়া হলো। মুখ দেখেই বড় একটা ঝাঁকুনি খেল মৌটুসী। এ যে ফাহিমের লাশ।

বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। দু চারজন কান্নাকাটি ও করছে। এক বুড়ো এসে বললো, ফাহিম পোলাটার মত মানুষ হয় না। এত কম বয়সেই ও চলে গেল?লাশের পাশে একটা চিঠি। ফাহিম মারা যাওয়ার আগেই চিঠিটা লিখে গেছে। চিঠি আস্তে আস্তে খুলছে মৌটুসী। তার হাত কাঁপছে। শরীরের সব রক্ত মনে হয় ঠান্ডা হয়ে গেছে। এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। চিঠি মনে মনে পড়তে লাগলো মোটুসী,

প্রিয়তমা মৌটুসী,

জানিনা কেমন আছো? চিঠিটা পড়ার পর হয়তও ক্ষণিকের জন্য মন খারাপ হয়ে যাবে। আজ তোমাকে কিছু কথা লিখতে বসেছি। আমার জীবনের কথা। যা তুমি জানোনা। কিংবা কখনো বুঝতেও পারোনি। সেই ছোট বেলায় মা মরে যায়। বাবা নতুন বিয়ে করে। সৎ মায়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠি। বাবা বুঝতে পারতো আমার কষ্ট গুলো। এই শহরে নিজেদের বাড়ি থাকা সত্তে¡ও আমি বড় হয়েছি হোস্টেলে। শুধু সৎ মায়ের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য বাবা আমাকে হোস্টেলে রেখে যায়।রাত হলে মাকে খুব মনে পড়তো। নীরবে কাঁদতাম। বাবা মাঝেমাঝে দেখতে আসতো। তাকে ছাড়তে ইচ্ছে হতোনা। কিন্তু সে আমাকে রেখে চলে যেত। যাওয়ার সময় বাবাও কিছু অশ্রু বিসর্জন দিয়েযেত। ভালবাসাহীন এক পৃথিবীতে আমি বড় হয়েছি। না পেয়েছি মায়ের আদর। বাবা থেকেও তার আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমার পৃথিবীতে আমি বড় একাই ছিলাম। কাউকে নিজের কষ্টের কথাগুলো বলতেও পারতাম না। তোমাকে বিয়ে করার পর ভাবলাম এই বুঝি আমার অবস্থার পরিবর্তন হলো। চাঁদের মত একটা বউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তুমি যখন ঘুমিয়ে   পড়তে আমি তোমার চাঁদ মুখখানির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। জোসনা রাতের উজ্জ্বল চাঁদের মত মুখখানি দেখতে দেখতে রাত কাটিয়ে দিতাম। তোমার হাসি আমার সব দু:খ ভুলিয়ে দিত। সারাদিন ক্লান্ত হয়ে যখন বাসায় ফিরতাম তখন তোমার মুখখানি দেখলে সব কষ্ট ভুলে যেতাম। জানো মৌটুসী,তুমি যখন লাল শাড়ী পরে খোপায় ফুল গেঁথে বসে থাকতে মনে হতো তুমি কোন ফুলধানীতে সাজানো ফুল। তোমাকে পেয়ে নতুন করে জীবনটাকে সাজাতে চেয়েছি। কিন্তু যখন জেনেছি তোমার মনে অন্য পুরুষ আছে। দীর্ঘদিন প্রেম করার পর বিয়ে না করার যন্ত্রনা। সেই প্রিয় মানুষের কাছে ছুটে যাওয়ার যে আকুতি। তা আমি উপলদ্ধি করেছি। তোমার মনের এক কোনেও আমি নেই। তারপর ও আমি চেয়েছি তুমি ভাল থেকো। আমার কপাল ভালনা। সারাজীবনিতো ভালবাসা হীন ছিলাম। বাকি জীবন ও সেভাবে কেটে দেয়ার ইচ্ছা ছিল। তোমাকে তোমার প্রিয় মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য আমিও সায় দিলাম। কিন্তুমৌটুসী জানো,তোমাকে ছাড়া আমার এক মুহুর্ত ও ভাল লাগেনা। তোমাকে ছাড়া এই পৃথিবী কল্পনাও করতে পারছিনা। তুমি চলে যাওয়ার পরে একটা রাত ও ঘুমাতে পারিনি। চোখের সামনে ভাসছে তোমার প্রিয় মুখখানি। কিভাবে তোমাকে ছেড়ে থাকবো বলো? আজ বা কাল তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবে। আমিই তোমাকে একটা অনুরোধ করেছিলাম যেন আমাকে তোমার বিয়ের এক সপ্তাহ আগে ডিভোর্স দাও। তুমি আমার সে কথা রেখেছিলে। আমি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবোনা। তোমাকে ছাড়া আমার পৃথিবী কল্পনাও করতে পারিনা। তাই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি জানি আত্মহত্যা মহাপাপ। তারপর ও আমার আর কোন পথ ছিলনা। একটু পরেই আমি মরে যাবো। আমি মরে গেলে হয়তও এক মুহুর্তের জন্য ও তোমার বুক কাঁপবে না। কারন তোমার মনে কখনোই আমি ছিলাম না। তবে মরে যাওয়ার আগে একটাই সান্ত্বনা আমার,আমি তোমার স্বামী হিসেবে মরতে পেরেছি।  চিঠি যখন তোমার হাতে পৌঁছাবে তখনও আমি তোমার স্বামী। মৌটুসী তোমার কাছে আমার একটা শেষ প্রশ্ন, আচ্ছা কখনো কি এক মুহুর্তের জন্য ও আমার ভালবাসা তুমি বুঝতে পারোনি? তুমি কি বুঝোনি আমি তোমাকে কত ভালবেসেছি? প্রশ্ন তোমার জন্য রেখে গেলাম। আমাকে ক্ষমা করে দিও।

ইতি

তোমার স্বামী ফাহিম



মৌটুসী চিঠিখানা পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গেল।ফাহিম মরে যাওয়ার পর মৌটুসীর জীবনেও অনেক পরিবর্তন এলো। আগের মত সেই হাসি এখন আর নেই । মৌটুসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর বিয়ে করবেনা। মৌটুসীর সিদ্ধান্তে তার সেই প্রেমিক ও বাবা মা অবাক হয়ে যায়। এ কি বলছে মৌটুসী? সে কি পাগল হয়ে গেছে? মৌটুসীর সোজা উত্তর,যে আমাকে এত ভালবেসেছে। তার ভালবাসার প্রতিদান আমি দিতে পারিনি। তার তো কোন দোষ ছিলনা। আমার কারনেই তাকে মরতে হলো। আমিও ওর স্মৃতি নিয়েই মরতে চাই। অন্য কারো জীবনের সাথে আর  জড়াতে চাইনা। প্রয়াত ফাহিমের স্ত্রী হিসেবেই সারা জীবন কাটিয়ে দেব।


জড়তা আবার কি?

 

জড়তা আবার কি?

তারেকুর রহমান 



জিতু ও তার বাবা মিলে বাসে করে এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছে। ঢাকায় বাসে সবসময় মানুষ গিজগিজ করে। অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কারনে বাসের ভেতরে ধাক্কাধাক্কি লেগেই থাকে। হঠাত বাস থামার সাথে সাথে পেছনের মানুষ গুলোর উপর পড়ে গেলো। একজন আরেকজনের উপর পড়ার কারনে বাসের ভেতরেই শোরগোল শুরু হয়ে গেলো। এতা যে ইচ্ছে করেই কেউ পড়েনি তা কাউকেই বুঝানো যাচ্ছেনা। জিতু ও তার বাবা বিশয়টা ভালোকরে দেখছে। হঠাত আবার বাস চলতে শুরুকরলো। এবার দাঁড়িয়ে থাকা সামনের যাত্রীগুলো পিছনের যাত্রী গুলোর উপর পড়ে গেলো। আবার শোরগল শুরু হয়ে গেলো। অনেকেতো হাতাহাতি শুরু করে দিলো। এই ঘটনা দেখে জিতু খুব বিরক্ত হয়ে গেলো। জিতু দাঁড়িয়ে বললো ,

-আপনারা সবাই একটু থামেন।

একজন দাঁড়িয়ে বললো,

-এই ছেলে তুমি আবার কি বলতে চাও।

জিতু একটু ঘাবড়ে যায়। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,

-আমি তেমন কিছু বলবোনা। শুধু একটা কথা বলতে চাই আপনারা অযথা যেটা নিয়ে ঝগড়া করছেন তা স¤পর্কে আপনারা কিছু জানেন?

একজন টিটকারি করে বললো,

-না আমরা কিছুই জানিনা সব তুমিই জানো। তো তুমি কি জানো বলো দেখি।

জিতু বললো ,

-শোনেন আপনারা, এই যে অযথা ঝগড়া করছেন এর পেছনে একটা সায়েন্স আছে। কিন্তু কি সে সায়েন্স সেই প্রশ্ন আপনার করতে পারেন। সায়েন্সটা হলো জড়তা। জড়তা শব্দতার সাথে আপনারা কেউ কেউ পরিচিত আবার কেউ কেউ পরিচিত না। বস্তু যে অবস্থায় আছে চিরকাল সেই অবস্থায় থাকার প্রবণতাকেই জড়তা বলে। জড়তা আবার দুই প্রকার এক হলো স্থিতি জড়তা আর দুই হলো গতি জড়তা। বাস হঠাত থেমে যাওয়ার কারনে আপনারা একজন আরেকজনের উপর পড়েছেন এটা হলো গতি জড়তা। গতিশীল বস্তু তার নিজের গতীতে চলতে চাওয়ার প্রবণতাকে গতি  জড়তা বলে। বাসটি গতিশীল ছিলো হঠাত যখন থেমে যায় তখন গতি জড়তার কারনে একজন আরেকজনের উপর গিয়ে পড়েছেন। আবার যখন বাস চলতে শুরু করলো তখন সামনের সবাই গিয়ে পেছনেরদিকে গিয়ে পড়েছেন। এটা স্থিতি জড়তার কারনেই হয়েছে। স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকার প্রবণতাকে স্থিতি জড়তা বলে।

জিতুর কথা শোনে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাতে থাকল।

একজন বললো,

-আসলে আমরা এভাবে চিন্তা করিনি। আমরা ভাবছি ইচ্ছে করেই কেউ ধাক্কা দিচ্ছিলো। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের ভুল সংশোধন করে দেয়ার জন্য।

Popular Posts

Adsence Advertise